সর্বশেষ

ইন দ্য মুড ফর লাভ পোয়েম

129
Before post box 1

‘বাহির বলে দূরে থাকুক, ভেতর বলে আসুক না’- এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গানের কথা। মারজুক রাসেলের লেখা এই গানের শিরোনাম- দ্বিধা।

সিনেমায় ব্যবহৃত এ গানটির উদ্দেশ্যই ছিলো চরিত্রের ভেতরকার দ্বিধা দর্শকের কাছে প্রকাশ করা।

 

গানটি সেই দিক থেকে সফল। কিন্তু সিনেমা কি সফল? চরিত্র বা গল্পকে দর্শকের কাছে প্রকাশের সবচেয়ে সহজ হাতিয়ারটি ব্যবহার করে সেই সিনেমার পরিচালক তার কাজ সেরেছিলেন। কিন্তু সিনেমার মুন্সিয়ানা এই- পরিচালক তার অভীষ্ট কথাটি আরো নানা প্রকারেই এ মাধ্যমটিতে প্রকাশ করতে পারেন।

স্বাধীন ধারার পরিচালক রিদোয়ানুল আজিম সম্প্রতি মুক্তি দিয়েছেন তার নবীনতম সৃষ্টি- ইন দ্য মুড ফর লাভ পোয়েম। এই সিনেমাটির মূল বিষয়বস্তু প্রেম। তবে, এই সিনেমা প্রেমের কোন সহজ-সরল গল্প বলে না। গল্পে চড়াই-উৎরাই খুব বেশি না থাকলেও চরিত্রের দ্বিধা, না বলা কথা, এবং বলে ফেলা কথার অন্তর্নিহিত অর্থ- এই হলো সিনেমাটির মূল রস। কতকটা ‘বাহির বলে দূরে থাকুক’ গানেরই মতো। তবে, পরিচালক তার চরিত্রের দ্বিধা, দ্বৈততা, প্রকাশে কোন সহজ পথ বেছে নেননি। বরং, হাজারো কথায় প্রকাশ করেছেন সিনেমার মূল দুটি চরিত্রের না বলা কথার প্রেম।

সিনেমাটি প্রেমেরই, এ নিয়ে কোন দ্বিধা নেই। কিন্তু একটিবারের জন্যেও এ সিনেমায় প্রেমময় কোন কথা বলতে শোনা যায়নি মূল দুই চরিত্রকে। এমনকি তাদের মনের ভেতরে জমে থাকা প্রেমও দর্শককে বুঝে নিতে হয়। এ জটিলতা সিনেমার নয়, মানুষের। ব্যক্তি মানুষের ভেতরকার জটিলতা, দ্বৈততার বহিঃপ্রকাশ এই সিনেমা। সংলাপ ও চরিত্রের আচরণের দ্বান্দ্বিকতায় প্রকাশিত হয় নতুন অর্থ। মন্তাজের আরেকটি রূপ দর্শকের সামনে ধরা দেয় ইন দ্য মুড ফর লাভ পোয়েম সিনেমায়।

সিনেমার গল্পটি অনেকটা এরকম- শান্তি নিকেতন থেকে পড়াশোনা শেষে বহু বছর পর দেশে ফেরা শিমু রবি ঠাকুরের রক্তকরবী নাটকের শো দেখতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়ে রাশেদ নামের এক পূর্বপরিচিতের। রাশেদ সেখানকার কাজ সেরে চলে যাচ্ছিলেন অন্য একটি জরুরি কাজে, কিন্তু তার আগেই শিমুর মুখোমুখি হয়ে পড়েন।

middle of post box 3

প্রাথমিক আলাপ শেষে এগিয়ে যেতে থাকে গল্প। দীর্ঘদিনের যোগাযোগহীনতা, অভিযোগ, অভিমান- এসব নিয়েই কথা আগাতে থাকে। কিন্তু, সেকেন্ড বেল পড়ে গেছে, কিছুক্ষণ পরই শুরু হবে নাটকের মঞ্চায়ন। রাশেদকেও যেতে হবে অন্যত্র, হাতে সময় নেই। তবুও তারা পরস্পরের সঙ্গ ছাড়তে পারছে না। জাগতিক সমস্ত কাজ ভুলে তারা কথার পিঠে কথা বলে চলে। এরইমাঝে অন্য এক চরিত্রের আগমনে রাশেদ জানতে পারে শিমুর বিয়ে আর ক’দিন বাদেই। এতেই আচানক বদলে যায় রাশেদ। তার আচরণে, অভিব্যক্তিতে এ পরিবর্তন চোখে পড়ে, সেই সাথে ঠিক বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে রাশেদের কথা।

একই অবস্থা শিমুরও। তার মধ্যকার দ্বিধা তার আচরণেও প্রকাশ পায়। শিমু রাশেদকে ভালোবাসে কি না, সেই দ্বিধা তো তার আছেই, একইসাথে হয়তো অপরাধবোধও তার ভেতরে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হচ্ছিলো। রাশেদের আচরণে তার সংশয় যেন আরো বেড়ে যায়। কেননা, তাদের দুজনের সম্পর্কটাও তো কখনো সংজ্ঞায়িত হয়নি। অধিকারবোধও তাই খাটে না। নিছক বন্ধুত্বও তো তা নয়!

সচরাচর গল্পে যেমন একটা পরিণতি দেখতে পায় দর্শক, এখানে তেমনটা নয়। রাশেদ-শিমুর পরিণতিহীন সম্পর্কের মতোই এই সিনেমাও পরিণতিহীন। ক্ষণিকের দেখা হওয়ার পর যে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গিয়েছিলো টঙের দোকানটিতে, তা ঝড়ের মতোই আচমকা শেষ হয়ে আসে। জীবন আদতে যেমন!

নির্মাতা রিদোয়ানুল আজিমের মতে, মানুষের অস্তিত্ব আসলে একটা দ্বৈতসত্তার সিম্ফনি। শুধু মানুষ না, আমাদের এই জগতটাই এমন। এ কারণেই রাশেদ ও শিমুর বেশিরভাগ আচরণ ও প্রতিক্রিয়া দ্বৈততার ছন্দে চালিত। ইন দ্য মুড ফর লাভ পোয়েমে আমি এই বিষয়টি শিমু ও রাশেদ চরিত্রদ্বয়কে দিয়ে খুব সরল ও ছন্দোবদ্ধভাবে আনার চেষ্টা করেছি।

চরিত্রের জটিল অনুভূতি নিয়ে হলেও সিনেমাটি মোটেই জটিল নয়, বরং মিষ্টি প্রেমের গল্পেরই মতো। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও পলি চৌধুরী। দুজনই তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে চরিত্র দুটি। এ ধরনের জটিল ও মনোজাগতিক চরিত্র ফুটিয়ে তোলা কষ্টসাধ্য, যা এ দুজন অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই করে দেখিয়েছে।

সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়ে গিয়েছে চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমিতে, গত ২৬ নভেম্বর। টানা চারটি শো’তে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীতে চট্টগ্রামের কয়েক’শ দর্শক অংশ নেন। সে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আরেক দফা প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। দর্শকপ্রিয়তায় এ সিনেমা চট্টগ্রামের উদীয়মান শিল্পধারার প্রথম সারির নাম হয়ে উঠবে, এটাই প্রত্যাশা।

after post box 2