সর্বশেষ

খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছে তা রাজনৈতিক সাজা -মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

92
Before post box 1

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু করেছি। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে সেই আন্দোলনের সূচনা হলো।’ র‍্যাবের মতো বর্তমান সরকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তো হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে হাসিনা সরকারকে। হাসিনা সরকারের নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, কাস্টডিতে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে।’ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার কিছুদিন আগে এসেছিলেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন যে এখানে গুম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট বেরিয়েছে কয়েকদিন আগে। তারা বলেছে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। এখানে গুম হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। ‘খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছে তা রাজনৈতিক সাজা বলেও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে সরকার। পলোগ্রাউন্ড থেকে নতুন আন্দোলনের সূচনা হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।‘আমাদের গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, এই দেশকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য এই চট্টগ্রাম থেকে আমরা দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু করেছি।
‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন, আমাদের লাখো শহীদকে স্মরণ করার আন্দোলন, লাখো মানুষকে মুক্ত করার যে আন্দোলন, আজ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে সেই আন্দোলনের সূচনা হলো।’তিনি বলেন, ‘দুদিকে তাকিয়ে দেখবেন বড় বড় ব্যানারে আমাদের কয়েকজন ভাইয়ের ছবি আছে। তারা কারা? যারা গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, জনগণকে অন্যায়-অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য শহীদ হয়েছে।’মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন জ্বালানি তেল আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করি, ভোলায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম প্রথম শহীদ হন। শহীদ হন ছাত্রদলের নূরে আলম। তারপর শহীদ হন নারায়ণগঞ্জে আমাদের যুবদলের নেতা শাওন৷ সবশেষ মুন্সীগঞ্জের শাওন। এরা কারা? এরা সাধারণ মানুষ,
‘এই সাধারণ মানুষগুলো বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। তারা বলেছে, ‘মারো আমাকে, কিন্তু দেশকে আমি মুক্ত করতে চাই। এই দেশকে মুক্ত করতে হবে হায়েনাদের হাত থেকে।‘আমরা গণতন্ত্র ফিরে চাই। আমাদের অধিকারগুলো ফিরে চাই, যে অধিকার আমরা পেয়েছিলাম ১৯৭১ সালে। আমাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আমাদের অধিকারগুলোকে ফিরে পেয়েছিলাম। সেই অধিকারগুলো আমরা ফিরে চাই।’সরকারের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চায় বিএনপি নতুন আন্দোলনে জেতা ছাড়া বিকল্প পথ নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫০ বছর হয়ে গেছে স্বাধীনতার। তখন যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য। আজ আবার যুদ্ধ করতে হবে গণতন্ত্রের জন্য। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। হয় আমরা জিতব, নয়তো মরে যাব।’দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার কথা বলেছিলেন। আজ চালের দাম ৭০ টাকা কেজি। সবকিছুর দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। শুনতে পাচ্ছি, বিদ্যুতের দামও নাকি বাড়াবে।‘পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, পানির দামও বাড়িয়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। কেন? কারণ একটাই। তারা লুট করে, চুরি করে, ডাকাতি করে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে।বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ডিসিরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছে- আমরা আপনার কথা মানি না; শেখ হাসিনার কথা মানি। এরকম নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোভাবেই নির্বাচন নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা তা পরিষ্কার করে বলেছি, আন্দোলন শুরু করেছি।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন ‘পুলিশ বলছে- লাঠি নিয়ে মিটিংয়ে আসা যাবে না। পুলিশকে এই অধিকার কে দিয়েছে? পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের টাকায় পুলিশের বেতন হয়। পুলিশকে মনে রাখতে হবে, তারা শেখ হাসিনার কর্মচারী নয়।’ ‘জনগণের একটাই দাবি- শেখ হাসিনার পতন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটাই স্লোগান- হঠাও মাফিয়া, বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা দিয়েছে। হামলা করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে। কিন্তু সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজকের সমাবেশকে জনতা মহাসমাবেশে পরিণত করেছে।’তিনি বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করছি। এসব দাবি শুধু বিএনপির নয়, ১৮ কোটি মানুষের।
এই সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার পতনের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এদেশে যতবার গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরাই গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছে। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।’সরকারের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চায় বিএনপি আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। জীবন দেব, গণতন্ত্র আনব, শেখ হাসিনার পতন হবে। নিরপেক্ষ সরকার আসবে, সেই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, জনগণের ভোটে সরকার গঠন হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকারের আর একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। শেখ হাসিনার বিদায়ের বার্তা এসে গেছে। চট্টগ্রামবাসী পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে- শেখ হাসিনা এখনই পদত্যাগ করুন। আগামীকাল নয়, পরশু নয়; আজই পদত্যাগ করুন।‘এইবার যখন নেমেছি আর বাড়ি ফিরে যাব না। যেভাবেই হোক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক-সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনব।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘সরকার খালি উন্নয়নের কথা বলে। এত উন্নয়ন উন্নয়ন করেন, এই উন্নয়ন তো এখন বাংলাদেশের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে গেছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা.শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের দেয়া বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ঠিকিয়ে রাখতে ভারতের সহযোগিতা চান। আরেকজন বলেন, পুলিশ হচ্ছে আওয়ামী-বান্ধব। পুলিশ না হলে আওয়ামী লীগ এতোদিন ক্ষমতায় থাকতে পারত না।

‘তাদের এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের আর কোনো রাজনীতিই থাকে না। ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকরাই এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছেন। আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, ভিপি জয়নাল আবেদীন, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুউদ্দীন খোকন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মৎসজীবী সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, কৃষকদলের সভাপতি জাফিরুল ইসলাম তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।

আরও বক্তব্য দেন- কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার, ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দীন আলাল, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, কেন্দ্রীয় জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, মহিলাদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহানা আকতার শানু, ওলামা দলের মাওলানা নেসারুল হক, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন।

বক্তাদের মধ্যে আরও ছিলেন- বিএনপি নেতা আলহাজ্ব এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, এনামুল হক এনাম, জসিম উদ্দিন শিকদার, ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দিন প্রমুখ।

 

middle of post box 3

খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছে তা রাজনৈতিক সাজা -মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু করেছি। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে সেই আন্দোলনের সূচনা হলো।’ র‍্যাবের মতো বর্তমান সরকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তো হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে হাসিনা সরকারকে। হাসিনা সরকারের নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, কাস্টডিতে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে।’ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার কিছুদিন আগে এসেছিলেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন যে এখানে গুম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট বেরিয়েছে কয়েকদিন আগে। তারা বলেছে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। এখানে গুম হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। ‘খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছে তা রাজনৈতিক সাজা বলেও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে সরকার। পলোগ্রাউন্ড থেকে নতুন আন্দোলনের সূচনা হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।‘আমাদের গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, এই দেশকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে আরেকবার পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য এই চট্টগ্রাম থেকে আমরা দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু করেছি।
‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন, আমাদের লাখো শহীদকে স্মরণ করার আন্দোলন, লাখো মানুষকে মুক্ত করার যে আন্দোলন, আজ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে সেই আন্দোলনের সূচনা হলো।’তিনি বলেন, ‘দুদিকে তাকিয়ে দেখবেন বড় বড় ব্যানারে আমাদের কয়েকজন ভাইয়ের ছবি আছে। তারা কারা? যারা গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, জনগণকে অন্যায়-অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য শহীদ হয়েছে।’মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যখন জ্বালানি তেল আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করি, ভোলায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম প্রথম শহীদ হন। শহীদ হন ছাত্রদলের নূরে আলম। তারপর শহীদ হন নারায়ণগঞ্জে আমাদের যুবদলের নেতা শাওন৷ সবশেষ মুন্সীগঞ্জের শাওন। এরা কারা? এরা সাধারণ মানুষ,
‘এই সাধারণ মানুষগুলো বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। তারা বলেছে, ‘মারো আমাকে, কিন্তু দেশকে আমি মুক্ত করতে চাই। এই দেশকে মুক্ত করতে হবে হায়েনাদের হাত থেকে।‘আমরা গণতন্ত্র ফিরে চাই। আমাদের অধিকারগুলো ফিরে চাই, যে অধিকার আমরা পেয়েছিলাম ১৯৭১ সালে। আমাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আমাদের অধিকারগুলোকে ফিরে পেয়েছিলাম। সেই অধিকারগুলো আমরা ফিরে চাই।’সরকারের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চায় বিএনপি নতুন আন্দোলনে জেতা ছাড়া বিকল্প পথ নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫০ বছর হয়ে গেছে স্বাধীনতার। তখন যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য। আজ আবার যুদ্ধ করতে হবে গণতন্ত্রের জন্য। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। হয় আমরা জিতব, নয়তো মরে যাব।’দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার কথা বলেছিলেন। আজ চালের দাম ৭০ টাকা কেজি। সবকিছুর দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। শুনতে পাচ্ছি, বিদ্যুতের দামও নাকি বাড়াবে।‘পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, পানির দামও বাড়িয়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। কেন? কারণ একটাই। তারা লুট করে, চুরি করে, ডাকাতি করে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে।বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ডিসিরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছে- আমরা আপনার কথা মানি না; শেখ হাসিনার কথা মানি। এরকম নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোভাবেই নির্বাচন নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা তা পরিষ্কার করে বলেছি, আন্দোলন শুরু করেছি।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন ‘পুলিশ বলছে- লাঠি নিয়ে মিটিংয়ে আসা যাবে না। পুলিশকে এই অধিকার কে দিয়েছে? পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের টাকায় পুলিশের বেতন হয়। পুলিশকে মনে রাখতে হবে, তারা শেখ হাসিনার কর্মচারী নয়।’ ‘জনগণের একটাই দাবি- শেখ হাসিনার পতন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটাই স্লোগান- হঠাও মাফিয়া, বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা দিয়েছে। হামলা করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে। কিন্তু সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আজকের সমাবেশকে জনতা মহাসমাবেশে পরিণত করেছে।’তিনি বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ করছি। এসব দাবি শুধু বিএনপির নয়, ১৮ কোটি মানুষের।
এই সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার পতনের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এদেশে যতবার গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছে জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরাই গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছে। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।’সরকারের ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চায় বিএনপি আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। জীবন দেব, গণতন্ত্র আনব, শেখ হাসিনার পতন হবে। নিরপেক্ষ সরকার আসবে, সেই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, জনগণের ভোটে সরকার গঠন হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকারের আর একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। শেখ হাসিনার বিদায়ের বার্তা এসে গেছে। চট্টগ্রামবাসী পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে- শেখ হাসিনা এখনই পদত্যাগ করুন। আগামীকাল নয়, পরশু নয়; আজই পদত্যাগ করুন।‘এইবার যখন নেমেছি আর বাড়ি ফিরে যাব না। যেভাবেই হোক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক-সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনব।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘সরকার খালি উন্নয়নের কথা বলে। এত উন্নয়ন উন্নয়ন করেন, এই উন্নয়ন তো এখন বাংলাদেশের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে গেছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা.শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের দেয়া বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ঠিকিয়ে রাখতে ভারতের সহযোগিতা চান। আরেকজন বলেন, পুলিশ হচ্ছে আওয়ামী-বান্ধব। পুলিশ না হলে আওয়ামী লীগ এতোদিন ক্ষমতায় থাকতে পারত না।

‘তাদের এই বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের আর কোনো রাজনীতিই থাকে না। ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকরাই এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছেন। আজকের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, ভিপি জয়নাল আবেদীন, এস এম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুউদ্দীন খোকন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মৎসজীবী সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, কৃষকদলের সভাপতি জাফিরুল ইসলাম তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।

আরও বক্তব্য দেন- কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার, ফেনী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দীন আলাল, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, কেন্দ্রীয় জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, মহিলাদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহানা আকতার শানু, ওলামা দলের মাওলানা নেসারুল হক, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন।

বক্তাদের মধ্যে আরও ছিলেন- বিএনপি নেতা আলহাজ্ব এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, এনামুল হক এনাম, জসিম উদ্দিন শিকদার, ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দিন প্রমুখ।

after post box 2