সর্বশেষ

চট্টগ্রাম কাস্টমস ২০ বার নিলামে তুলেও বিক্রি করতে পারেনি অনেক পণ্য!

143
Before post box 1

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বারবার নিলামে তোলার পরও কিছু পণ্যে সাড়া পাচ্ছে না চট্টগ্রাম কাস্টমস। ক্রেতার অনাগ্রহ থাকায় মাসের পর মাস পণ্যগুলো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। পর পর ২০ বার নিলামে তুলেও বিক্রি হয়নি এমন পণ্যও রয়েছে। অনেক সময় পুরোনো পণ্য বার বার নিলামে তুললেও বাজারে চাহিদা না থাকায় ক্রেতারা সেসব পণ্য কিনতে আগ্রহী নয় বলে দাবি করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির পর দীর্ঘদিন ধরে খালাস না নেওয়া ৫১ লট পণ্যের নিলাম প্রক্রিয়া শেষে দরপত্র খোলা হয়েছে গত ৩০ অক্টোবর। এটি চলতি বছরের ৪২তম নিলাম। তবে এ নিলামে আশানুরূপ সাড়া পায়নি চট্টগ্রাম কাস্টমস। নিলামে তোলা ৫১ লটের মধ্যে ২১ লট পণ্যের সাড়া মেলেনি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর নিলামের আয়োজন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত মাসের ২৩ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত পণ্যগুলো দেখার সুযোগ পায় ক্রেতারা। ২৬ ও ২৭ অক্টোবর দরপত্র দাখিল করে আগ্রহী ক্রেতারা। তবে ৩০ অক্টোবর দরপত্র খুলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। প্রথম তিন মেগালটে তোলা পিভিসি শীট, লিকুয়িড পণ্য, ফিনিশিং এজেন্ট, হাইড্রোলিক এসিড, ডায়েসিড এইচপি, চেয়ার, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, প্লাস্টিক বাকল নিলামে তুললেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে ২৭০ কেজি ওজনর হাইড্রোলিক এসিড ২০ বার, তিন ড্রাম ডায়েসিড এইচপি ১৮ বার, ছয় কার্টন প্লাস্টিটক হ্যাঙ্গার ১২ বার ও ছয় পিস চেয়ার ৮ বার নিলামে তুললেও বিক্রি হয়নি।

সাড়া মেলেনি ১১ থেকে ১৪ নম্বর লটেও। এরমধ্য ১৪ নম্বর মেগালটে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ও কেমিক্যাল পণ্য রয়েছে। এসব লটে ৮ জারে থাকা অপরিশাধিত ডিজেল, ১০ ড্রাম থিনার, ১৪০ ড্রাম ফ্লুইড কেমিক্যাল, ৫ জার ফর্মালডিহাইড, ৩৫ ড্রাম কেমিক্যাল পণ্য, ৭৫ পিস ডায়রি, ৬ জার ফসফরিক এসিড, ২ জার পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড, ১০ কৌটা ফেনল, ১ ক্যান হাইড্রালিক ওয়েল, ৩ বোতল ফর্মালডিহাউড, ১৩০ গ্যালন সালফিউরিক এসিড পণ্য রয়েছে। জারগুলোর গায়ে লেবেল নেই। সেই সঙ্গে পণ্যের গায়ে মেয়াদের তারিখ ও আমদানি করা দেশের নাম উল্লেখ নেই। তাই পণ্যগুলো বিক্রি হয়না বলে জানিয়েছে কাস্টমস সূত্র।

এদিকে ১৭ নম্বর লটে ৬০ পিস কাঠ জাতীয় পণ্য এবার প্রথমবারের মত নিলামে তুললেও পড়েনি কোন দরপত্র। ২৩ নম্বর লটে রয়েছে ২ রোল ফেব্রিক্স পণ্য। এ পর্যন্ত ১৬ বার পণ্যগুলো নিলামে তোলা হয়েছে। ২৪ নম্বর লটে আছে ১ প্যালেট রাইস মিল মেশিনারিজ। এ পণ্যটিও ১৭ বার নিলামে উঠেছে। তাছাড়া ৩১ নম্বর লটে থাকা ৪ পিস ফুলদানি, ৩২ নম্বর লটে থাকা ১ রোল কটন ফেব্রিক্স ও ৩৩ নম্বর লটে থাকা ৪ রাল কটন পিসড টুইল পণ্য নিলামে উঠলেও বিক্রি হয়নি।

middle of post box 3

৩৬ থেকে ৪২ নম্বর লটে থাকা পণ্যের বিপরীতে কোন দরপত্র জমা পড়েনি। এসব লটে ১৫ কেজি জিপার, ১১ কার্টন প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, ২১ রোল ফব্রিক্স পণ্য ও ৭০ পিস মেটাল ফ্রেম রয়েছে। ৪৬ নম্বর লটে ৬ ব্যাগ তেতুলের বীজ রয়েছে। কিন্তু এসব পণ্য কিনতে আগ্রহী নন ক্রেতারা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার (নিলাম শাখা) সন্তোষ সরেন বলেন, আমরা গত মাসর শেষ দিকে চলতি বছরের ৪২তম নিলামের আয়াজন করেছিলাম। এ নিলামে ৫১ লট পণ্য নিলামে তোলা হলেও ২১টি লটে কোন দরপত্র পড়েনি। এরমধ্যে তেতুলের বীজ, জ্বালানি, রাসায়নিক পণ্য, ফেব্রিক্সসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। প্রায় প্রতিটি নিলামেই কিছু পণ্য অবিক্রিত থেকে যায়। অনেক সময় পুরোনো পণ্য নিলামে তোলা হয়। এসব পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে ক্রেতারা নিতে চান না।

আইনি জটিলতায় আটকে পড়া, আশানুরূপ বাজার মূল্য না পওয়াসহ নানা কারণে আমদানিকারকরা অনেক সময় পণ্য খালাস নেন না। সেসব পণ্যের মধ্যে যেগুলো খাওয়া কিংবা ব্যবহার উপযোগী, সেগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ থেকে অর্জিত অর্থ পায় বন্দর ও কাস্টম। আর ব্যবহার অনুপযোগী ও নষ্ট হওয়া পণ্য ধ্বংস করা হয়।

গত ৫ নভেম্বর ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, কনটেইনারসহ নষ্ট হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া বিভিন্ন পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে নতুন নিলাম শেডে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে কাস্টমস কর্তপক্ষ। যথাসময়ে নিলাম না হওয়া কিংবা নানা জটিলতায় পড়ে থাকা পণ্যগুলোও এই নিলাম শেডে রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে তা এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কাস্টমস কর্মকর্তারা।

তবে পণ্যগুলো পুরোপুরি সরিয়ে নিলে লাভবান হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইয়ার্ডের ভেতরের এই জায়গায় কনটেইনার রাখার পাশাপাশি কনটেইনারবাহী গাড়িগুলো সহজে চলাচল করতে পারবে বলে মনে করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ২০১৫ সালে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে আধুনিক সুযোগসুবিধা দিয়ে বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে অকশন শেড বানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে পণ্য সরিয়ে নিচ্ছে কাস্টমস। ফলে বন্দরের ভেতরে কনটেইনার রাখার জায়গা বাড়বে এবং বন্দরের কার্যক্রমে গতি বাড়বে।

 

after post box 2