সর্বশেষ

মাহে রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম

110
Before post box 1

এম সোলাইমান কাসেমী :: মহানবী (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তাঁর পবিত্র জন্মও হয়েছে অলৌকিক পন্থায়। তাঁর জন্মে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর স্মরণ সব জাতি, সব যুগে করেছে। মাহে রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব অপরিসীম। ছরকারে দু আলম দু জাহানের বাদশাহ সাইয়্যেদুল মুরসালিন হাবীবে খোদা হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন এই মাসে। যিনি বিশ্বনবী, শেষ নবী, যার শুভাগমনে ধন্য সমগ্র জগৎ, আলোকিত মক্কার মরুপ্রান্তর, যার কারণে চিরভাস্বর মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ।

স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন, সমগ্র জগৎবাসীর জন্য আপনাকে রহমত করেই প্রেরণ করেছি। ওই আয়াত প্রমাণ করছে রসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। আরও ইঙ্গিত বহন করছে আল্লাহ জগৎসমূহের রব এবং তার প্রিয়বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন এ জগৎসমূহের রহমত। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা মালিকানা যে পর্যন্ত বিস্তৃত, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুয়ত সে পর্যন্ত ব্যাপৃত।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন যে বরকতপূর্ণ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত রবিউল আউয়ালে সংঘটিত সঙ্গত কারণেই সে মাসটি উম্মতে মোহাম্মদী তথা জগতবাসীর কাছে সম্মানিত, তাৎপর্যমন্ডিত ও মহিমান্বিত। এমনকি বছরের মাস সমূহের মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শ্রেষ্ঠত্ব, গুরুত্ব ও মহত্ত্ব সবচেয়ে বেশি ও অতুলনীয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র রমজান ওই সম্মানিত মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআন নাজিলের মাস নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ, সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ। আরও ইরশাদ হয়েছে- কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। রসূল (সা.)-এর ঐতিহাসিক ও গোটা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেওয়া এবং আধুনিক যুগের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানীদের হার মানিয়ে দেওয়া এমনকি চাঁদের দেশ ও মঙ্গল গ্রহের রকেট যাত্রীদের চিরপরাস্তকারী ও নতিস্বীকারে বাধ্যকারী মিরাজের ঘটনা, আরশে আজিমে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের ঘটনা যা কোরআনে কারিমে আল্লাহ এভাবে উল্লেখ করেছেন।

অন্য আয়াতে- পবিত্রতা আল্লাহর যিনি তার বান্দা মুহাম্মদ (সা.)-কে রাতের কিয়দাংশ মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন। অনন্তর দুই ধনুক অপেক্ষাও কম ব্যবধান রইল। অতঃপর আল্লাহ তার প্রিয় বন্ধু (মুহাম্মদ সা.) কাছে প্রত্যাদেশ করলেন। এবারে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হলো, কোরআনে কারিমে উল্লিখিত এসব আশ্চর্যান্বিত, তাৎপর্য-মন্ডিত, সম্মানিত মাস, রজনী, দিবস, ক্ষণ, ঘটনাবলি এর অর্জন ও প্রাপ্তিতে উম্মতে মুহাম্মদী তথা জগৎবাসী সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান হয়েছে একমাত্র বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কারণে ও মাধ্যমে। আর নবীকূল শিরোমণির শুভাগমন হয়েছে মাহে রবিউল আউয়ালে। তাই তো এ মাসটির ফজিলত, গুরুত্ব ও মহত্ত্ব অধিক ও অপরিসীম হওয়াই ইমানের দাবি।

আরও পড়ুন

মহান বিজয় দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা

বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি, নিয়োগ বাংলাদেশে

middle of post box 3

এতদ্ভিন্ন এই রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে আরও বহু ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে, যা মাহে রবিউল আউয়ালের মর্যাদা ও গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে-
মহান আল্লাহ পাক নিজে বলেছেন হে আমার হাবিব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি তোমাকে যদি সৃষ্টি করতাম না তাহলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতাম না।

মা খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর সঙ্গে রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পরিণয় হয়েছিল ১০ রবিউল আউয়াল। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের উদ্দেশে রওনা করেছিলেন ১ রবিউল আউয়াল। তিনি মদিনায় পৌঁছেন ১২ রবিউল আউয়াল।

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন ১৬ রবিউল আউয়াল।
মাহে রবিউল আউয়ালের আগমন ঘটে নবী প্রেমের প্রতীক ও নিদর্শন হিসেবে। যার হৃদয়ে নবীপ্রেম ও নবীর ভালোবাসা থাকবে, রবিউল আউয়াল তার অন্তকরণে আবেগ, উচ্ছাস আর স্পন্দন সৃষ্টি করবে। উৎসাহিত আর প্রত্যয়ী করবে নবী (সা.)-এর আদর্শ ও সুন্নাতের প্রতি। আল্লাহই তো ঘোষণা করেছেন নিশ্চয়ই রসূল (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। রসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার পিতা-মাতা, সন্তান এবং অন্যান্য মানবকূলের চেয়ে।

মহানবী (সা.) সৎ স্বভাব, সত্যনিষ্ঠা, সৌজন্যবোধ, বিনয় ও নম্রতার যে অনুপম শিক্ষা দিয়েছেন, তা আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পারস্পরিক সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারি। তাঁর সাধারণ জীবনযাপন, বিনম্র আচার-আচরণ, উপদেশাবলি অনুশীলন করলে এবং আদর্শ গুণাবলি নিজেদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুশীলন করে চললে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভে ধন্য হতে পারে।
তাই নবী করিম (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ থেকে মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা ও মানবকল্যাণ সুনিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়।

অতএব, আমাদের উচিত হবে রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনের এই মাসকে কেন্দ্র করে আমরা বেশি বেশি করে নামাজ কোরআন শরীফ তেলাওয়াত দরুদ শরীফ ও মিলাদ শরীফ পড়ে তার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার মহান আদর্শ ও সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরে ইহকালীন ও পরকালীন অগ্রগতি ও মুক্তিলাভে সাফল্যমন্ডিত হওয়া। মাহে রবিউল আউয়াল মাসের বরকত, রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহব্বত ও পরকালীন নাজাত মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নসিব করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

after post box 2