সর্বশেষ

পাহাড় কেটে বিক্রি: জালালাবাদ মাদরাসার হাফেজ তৈয়্যব কারাগারে

210
Before post box 1

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগরে পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার প্রধান আসামি জালালাবাদ তালীমুল কোরআন মাদরাসার পরিচালক হাফেজ তৈয়্যবকে কারাগারে পাঠিয়েছেন একটি আদালত। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। বুধবার (২৩ নভেম্বর) পরিবেশ অধিদপ্তরের পিপি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশিদ তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন আরেফিন নগরে পাহাড় কেটে সরকারি খাসজমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে গত ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় তালীমুল কোরআন মাদরাসার পরিচালক হাফেজ মুহাম্মদ তৈয়বসহ (৫৫) ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলাটি দায়ের করেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন।

মামলায় হাফেজ তৈয়্যব বাদেও তালীমুল কোরআন মাদরাসার নির্বাহী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ (৪৮), চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানাধীন বৈলতলী গ্রামের মৃত বজল আহম্মদের ছেলে মো. আজিজুল হক (৩৫), মাদরাসার নুরানী বিভাগের প্রধান আবদুল মান্নান (৩৫), বাঁশখালীর বৈলছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দফাদার বাড়ির মৃত জাকারিয়ার ছেলে আবদুল মাবুদ (৪৫), ভুজপুর থানাধীন ছিকনছড়া বাজার ইউনিয়নের আবদুছ ছোবহানের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (৫০), মাদরাসার খাদ্য বিভাগের পরিচালক আনছার উল্লাহ (৩৮), তালীমুল কোরআন মাদরাসা এলাকার নুরুল হকের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩৫), চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানাধীন রাজঘাটা এলাকার আজিজুর রহমানের স্ত্রী মিফতাহুল জান্নাত (২০), মাদরাসা এলাকার আনছার উল্লাহর স্ত্রী কামরুন নাহার (২৪), বাঁশখালীর বাহারছড়া রতনপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে দেলোয়ার হোসেনকে (৭০) আসামি করা হয়।

middle of post box 3

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনির হোসেন, ১ সেপ্টেম্বর পরিদর্শক রুম্পা শিকদারসহ সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন জালালাবাদ মৌজার ১নং খাস খতিয়ান এবং ১৩৭ নং খতিয়ানের ৭০৩, ৭০৫ এবং ৭১৬ দাগের পাহাড় শ্রেণির জমি পরিদর্শন করে দেখতে পান পাহাড় কেটে বসতি বানিয়ে লোকজন বসবাস করছেন। বসবাসকারীরা তালীমুল কোরআন মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে জায়গার দখল বুঝে নিয়ে ৬ থেকে ১১ বছর ধরে তারা বসবাস করছেন বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানান। পরিদর্শনকালে ওই স্থানগুলোতে প্রায় ৮০ হাজার বর্গফুট পাহাড় কাটা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া গত ২৪ আগস্ট পরিদর্শনের পর তালীমুল কোরআন মাদরাসার পরিচালককে নোটিশ দিয়ে শুনানিতে ডাকা হলে কেউ হাজির না হওয়ায় থানায় মামলা দায়ের করা হয় বলে মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, জালালাবাদ তালীমুল কোরআন মাদরাসার আশপাশে মাদরাসার নাম বিক্রি করে পাহাড় কেটে সরকারি জন্য সাধারণ মানুষের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন থেকে জানতে পেরে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। পাহাড় কেটে এবং সরকারি জমি সাধারণ মানুষের বিক্রির অভিযোগ থাকায় মাদরাসাটির পরিচালককে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়। কিন্তু তিনি হাজির হননি। তাই থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর আগেও ২০২০ এবং ২০২১ সালে পৃথকভাবে অধ্যক্ষ তৈয়্যবকে ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ৭৮ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) আরোপ করা হয়েছিল। এরপর তিনি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আপিল করেন। আপিলগুলো নিষ্পত্তির অপেক্ষয় আছে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু হজ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ প্রকল্পের নামে সরকারি খাসজমি দখল করার অভিযোগও আছে জালালাবাদ তালীমুল কোরআন কমপ্লেক্সের নামে। জালালাবাদ মাঝেরঘোনা এলাকায় বিস্তৃর্ণ পাহাড় ও টিলা কেটে দখল করার অভিযোগ পাওয়ার পর গত ১১ মার্চ অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ বসতি গুঁড়িয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই হজ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নামেও সাইনবোর্ড তুলেছিলেন হাফেজ তৈয়্যব।

after post box 2