সর্বশেষ

যেসব কারণে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে

93
Before post box 1

 

এস এম আরিফুল কাদের : মানুষের মৌলিক চাওয়া হলো-খাদ্য, পোশাক ও বাসস্থান। কোনো জনপদের মানুষের জীবনে এসব চাওয়া পূর্ণ করা দুঃসাধ্য হলে এবং খরা, যুদ্ধ বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম কারণে খাদ্যসংকট দেখা গেলে, তাকে দুর্ভিক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। দুর্ভিক্ষ আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে সৃষ্টি হয়। সুতরাং তা থেকে বাঁচতে হলে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসা এবং তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করা জরুরি। যেসব কারণে পৃথিবীতে খরা-দুর্ভিক্ষ নেমে আসে, হাদিসের আলোকে তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো:

অপচয়-অপব্যয় : অপচয় অর্থ অপ্রয়োজনে ব্যয় করা এবং অপব্যয় অর্থ অপাত্রে ব্যয় করা। ইসলামের দৃষ্টিতে দুটিই নিন্দনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর কাপড় পরো, খাও ও পান করো এবং অপচয় কোরো না। তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১) অন্য আয়াতে অপব্যয়ীদের শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার না করলে তিনি তা কমিয়ে দেন এবং অভাব সৃষ্টি করে দেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর তোমরা অকৃতজ্ঞতা দেখালে আমার শাস্তি কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

জাকাত ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি : জাকাতের মর্ম কথাই হলো-ধনী-দরিদ্রদের পার্থক্য কমিয়ে আনা। প্রকৃত মুমিন কখনোই জাকাত আদায় থেকে বিরত থাকে না। জাকাত আদায় করলে পৃথিবীতে আল্লাহর করুণা বর্ষিত হয়। মুসলিম রাষ্ট্রে যখন জাকাতের সঠিক বণ্টনের ব্যবস্থা থাকে, তখন সেখানে অভাবী মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। আর রাষ্ট্র যখন জাকাত আদায় ও বণ্টনে ব্যর্থ হয়, তখন আল্লাহর রহমত বন্ধ হয়ে যায় এবং পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কোনো জাতি জাকাত না দেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের দুর্ভিক্ষে নিপতিত করেন।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)

আরও পড়ুন

মহান বিজয় দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা

বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি, নিয়োগ বাংলাদেশে

middle of post box 3

সুদভিত্তিক লেনদেন : সুদ শোষণের হাতিয়ার। সুদভিত্তিক লেনদেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শামিল। সুদে বরকত নেই। আল্লাহ তাআলা বরকত রেখেছেন দান-সদকায়। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ সুদ কমিয়ে দেন এবং সদকা বাড়িয়ে দেন।’ (সুরা বাকারা: ২৭৬) সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে এবং দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যাদের মধ্যে সুদ প্রসার লাভ করে, তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ) মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রুম: ৪১)

ব্যভিচার : ইসলাম অবাধ যৌনতার স্বীকৃতি দেয় না। তাই যৌন চাহিদা নিবৃত্ত করতে বিয়ে করার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে যখন ব্যভিচার ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তারা নিজেরাই যেন তাদের ওপর আল্লাহর আজাব নামিয়ে আনে।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যভিচার ব্যাপকতা লাভ করে, তারা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ)

ওজনে কম দেওয়া : ওজনে কম দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে জাতির মধ্যে ধোঁকা, প্রতারণা, ঠকবাজি বেড়ে যাবে, তাদের অভাব ও দুর্ভিক্ষ গ্রাস করে নেবে। হাদিসে এসেছে, ‘…যখন কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা কম দেয়, তখন শাস্তিস্বরূপ তাদের খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে…।’ (ইবনে মাজাহ)

মোটকথা, অন্যায়-অপকর্ম যখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ তাআলা অভাব-খরা-দুর্ভিক্ষ দিয়ে মানুষকে শাস্তি দেন। তাই আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে তার কাছে একনিষ্ঠ হয়ে তওবা করার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম: ৪১)

লেখক: আলেম ও গবেষক

after post box 2