সর্বশেষ

২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য

118
Before post box 1

ঢাকা: আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আলোচনা অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, টকশো-আলোচনা ইত্যাদি।

 

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘ট্রান্সফরমিং লিটারেসি লার্নিং স্পেস’ অর্থাৎ সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার।

দিবসটি উপলক্ষ্যে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দিয়ে জানান, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে সাক্ষরতার হার বেড়েছে। তবে এখনও প্রায় ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। এসব জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষর করতে না পারলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

তিনি জানান, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় শিক্ষাদানের আওতায় নিয়ে আসা এবং ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব নিরক্ষর ব্যক্তিদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪’ এর আওতায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু যারা আগে কখনও স্কুলে যায়নি বা স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নারী-পুরুষদের চাহিদাভিত্তিক জীবন ও জীবিকায়ন-দক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের ফলস্বরূপ একদিকে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষাক্রম থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা সমাপ্তির হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন
middle of post box 3

নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান জানান, সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়া।

রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ সাক্ষরতা দেওয়া জরুরি। কোভিড-১৯ মহামারির পুষিয়ে নিতে ‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’ ও ‘বাংলাদেশ বেতার’ এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ভিত্তিক পাঠদান অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রচলিত ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিখন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে জীবিকায়নের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে বলে আমি মনে করি। মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা দর্শনের আলোকে আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এর সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের সরকারের বিগত সাড়ে ১৩ বছরে গৃহীত বিভিন্ন সময়োপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে শিক্ষা খাতে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিক্ষার হার ২০০৭ সালের ৪৬.৬৬ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭৪.৬৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের সরকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৪০০ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে। বিনামূল্যে বই বিতরণের পাশপাশি বিভিন্ন ধরনের মেধাবৃত্তি, উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে শিক্ষার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে আমরা প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি। আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করে, বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (৪ আর) মাথায় রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা কার্যক্রমে আইসিটি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়াও সব নিরক্ষরকে মৌলিক সাক্ষরতা জ্ঞান দেওয়ার ক্ষেত্রে আইসিটি বেইজড জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনলাইন, সংসদ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন এবং শিক্ষার গুণগতমান ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে।

after post box 2