সর্বশেষ

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মর্যাদা

100
Before post box 1

 

আরও পড়ুন

মহান বিজয় দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা

বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি, নিয়োগ বাংলাদেশে

middle of post box 3

প্রফেসর ড.আ.ম. কাজী মুহাম্মদ হারুন উর রশীদ ::জ ১২ রবিউল আউয়াল রবিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কেন্দ্র করেই সবকিছুর সৃষ্টি। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন- যদি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করা না হতো তাহলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না এবং সৃষ্টি করতাম না জান্নাত ও জাহান্নাম। – (মুসতাদরাকে হাকেম)। হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টির আগেও হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবী ছিলেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন- আমি তখনও ছিলাম নবী; যখন আদম ছিলেন রুহ্‌ এবং দেহের মধ্যে । -(মুসনাদে আহমদ)

হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত যত নবী- রাসুল এসেছেন তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আমাদের প্রিয় নবী সায়্যিদুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন, শফিউল মুজনেবীন মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)। তিনি নবীও রাসুলগণের সর্দার। তাঁর আগমনে বিশ্ববাসী পেয়েছে আলোর সন্ধান এবং তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ মানুষকে দিয়েছে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বীশেষে সবাই তাঁর কাছে পেয়েছে তাদের আশার বাণী এবং লাভ করেছে ইহকাল ও পরকালের মুক্তি। আল্লাহ্‌পাক রাসুল (সা.)-কে সারা বিশ্বের জন্যে রহমতের প্রতীক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্‌তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘ওয়ামা আরসাল্‌নাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামীন।’ আমি আপনাকে সমগ্র বশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি।
সৃষ্টির প্রথম দিন হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর তাঁর ডান পাশ থেকে সকল সন্তানকে আল্লাহ্‌ তায়ালা বের করে আনলেন। তখন তারা ছিলো পিঁপড়ার ন্যায়। কিয়ামত পর্যন্ত যতো মানুষ এ পৃথিবীতে আসবে সকলেই আল্লাহ্‌ তায়ালা সেই দিন একত্রিত করেছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আলাস্‌তু বিরাব্বিকুম’ আমি কি তোমাদের রব নই?
সৃষ্টির সাথে এটাই ছিলো স্রষ্টার প্রথম কথা। সেদিন সর্বপ্রথম যিনি
এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন রাহ্‌মাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এটিও রাসুল (সা.)-এর একটি বিশেষ মর্যাদা। রাসুল (সা.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেছেন- ‘ আনা সায়্যিদু ওয়ালাদি আদামা ইয়াওমাল কিয়ামাতি ওয়ালা ফাখারা।’ অর্থাৎ আমি কিয়ামত দিবসে আদম সন্তানদের সর্দার। এতে আমার কোনো অহংকার নেই। তিনি আরো বলেছেন- ‘কিয়ামতের দিন আমার হাতে থাকবে হামদের পতাকা। আদম (আ.) এবং অন্য সকল নবী-রাসুলগণ আমার পতাকাতলে সমবেত হবেন। আর কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম আমি পুনরুত্থিত হবো। এতে আমার কোনো অহংকার নেই।- (তিরমিজি, ৩১৪৮)। প্রিয় নবী (সা.)- এর হাদিসে আরো এসেছে, তিনি বলেছেন-
আমিই প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। এতে আমার কোনো অহংকার নেই। আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের কড়া নাড়বো। আল্লাহ জান্নাতের দরজা খুলে দিবেন এবং আমাকে প্রবেশ করাবেন। আর আমার সাথে থাকবে গরিব মু’মিনগণ। এতে আমার কোনো অহংকার নেই। আর আমি হবো আমার আগের ও পরের সকল মানুষের চেয়ে মর্যাদাবান এতে আমার কোনো অহংকার নেই।-(তিরমিজি, হাদিস নং-৩৬১৬)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন- কিয়ামত দিবসে নবীদের মধ্যে আমিই হব সর্বাধিক অনুগামি (সুপারিশের জন্যে)। আমি বেহেশতের নিকট উপনীত হয়ে দ্বার উন্মোচন করতে বলবো। তখন বেহেশ্‌তের প্রহরী বলবে- আপনি কে? আমি বলবো-আমি মুহাম্মদ। তখন সে বলবে- আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেবল আপনারই জন্য দরজা খুলতে; কিন্তু আপনার আগে কারো জন্য নয়।-
(মুসলিম, হাদিস নং- ৩৩৩)।
প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) -কে হযরত আদম (আ.)- এর আবির্ভাবের অনেক আগেই উর্ধ্বজগতে নবুওয়তের অভিষেকে অভিষিক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ ্‌তায়ালা তাঁর নবুওয়তের মাধ্যমেই নবুওয়তের ধারাবাহিকতার সূচনা করেন এবং তাঁর দ্বারাই পৃথিবীতে নবী আগমনের সমাপ্তি ঘটান। রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন- ‘আমি রাসুলগণের ভূমিকা এবং নবীগণের উপসংহার। এতে আমার কোনো গর্ব নেই।’
রাসুলে করিম(সা.)-এর অতুলনীয় মর্যাদা সম্পর্কে এসেছে, হযরত জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্‌ আনসারী (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন- আমাকে আল্লাহ্‌ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন পাঁচটি বিষয় দেয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কাউকে দেওয়া হয়নি। এতে আমার কোনো গর্ব নেই। ১. পূর্ববর্তী নবী-রাসুলগণ কোনো বিশেষ জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। আর আমি সমগ্র মানব জাতির জন্যে প্রেরিত হয়েছি। ২. আমার জন্য দুনিয়ার সমগ্র মাটি মসজিদের মতো পরিণত করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, জমিনের যে কোনোঅংশে উম্মতে মুহাম্মদিয়া যাতে নামাজ আদায় করতে পারে এবং মাটি দ্বারা তৈয়ম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করতে পারে। ইতোপূর্বে অন্য কোনো উম্মতের এসুযোগ ছিলো না। ৩. আমার জন্যে যুদ্ধলব্দ সম্পদ (গণীমত) হালাল করে দেওয়া হয়েছে। যা আমার আগে কারো জন্য হালাল ছিলো না। ৪. আমাকে সাহায্য করা হয়েছে শত্রুর অন্তরে ভয়-ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে। ৫. আমাকে ব্যাপকভিত্তিক সুপারিশের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তায়ালা প্রত্যেক নবীকে একটি করে বিশেষ সুপারিশের অধিকার দান করেছেন। অন্য নবীগণ দুনিয়াতেই সেই অধিকার ব্যবহার করেছেন; কিন্তু আমি বিশেষ সুপারিশের এ অধিকার আমার উম্মতের জন্য সংরক্ষণ করেছি। যে আল্লাহ্‌ তায়ালার সাথে কেনো কিছুকে শরীক করে নাই, সে কিয়ামতের দিন এ সুপারিশ লাভ করবে ইনশাআল্লাহ্‌। -(মুসলিম, হাদিস নং- ৫২১)।
রাসুল (সা.)-এর বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে শবে মি’রাজ। এই মি’রাজে তিনি সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে আল্লাহ্‌ তায়ালার দিদার লাভে ধন্য হয়েছেন। যা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। সমস্ত নবীগণের ইন্তেকালের মাধ্যমে নবুওয়াত শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর নবুওয়াত তাঁর ওফাতের পরেও শেষ হয়নি; বরং তিনি নবী ছিলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত নবী থাকবেন। এই জন্য সারা বিশ্বে আজানের সময় দৈনিক পাঁচবার ‘আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার্‌ রাসুলুল্লাহ্‌’ উচ্চারণ করে সমগ্র বিশ্বের আকাশ বাতাসকে মুখরিত রা হয়। এটিও একটি রাসুল (সা.)-এর বিশেষ মর্যাদা। রাসুল (সা.) হচ্ছেন হাবিবুল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করেন, ফেরেশতাগণ দরুদপাঠ করেন এবং মুমিনগণকেও আল্লাহ তায়ালা দরুদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে এসেছে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হ মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং তাঁকে থাযথোভাবে সম্মান করো। -(সুরা আল-আহ্‌জাব, আয়াত:৫৬)।
রাসুলে করিম (সা.)-এর উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ্‌পাক বলেন- ওয়ারাফা’না লাকা যিক্‌রাক্‌’ আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি। -(সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত:৪)। এটিও রাসুল (সা.) এর ন্যতম একটি মর্যাদা। আাসুন, আমরা রাসুল (সা.)-এর অতুলনীয় মর্যাদাকে যাথাযথোস্থান দেই। আল্লাহ্‌পাক আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন ।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক; প্রফেসর, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

after post box 2