সর্বশেষ

মিরাজ-মোস্তাফিজের হাত ধরে ঐতিহাসিক জয়

89
Before post box 1

 

নিউজ ডেস্ক :: দ্বীপক চাহারের বল কাভার দিয়ে ঠেলে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সঙ্গে সঙ্গেই যেন বুঝতে পারলেন ঘটনাটা অথবা কে জানে হয়তো বুঝলেন না।
ড্রেসিং রুমের দিকে দৌড় শুরু করলেন, সতীর্থরা এসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। ছোটখাটো এক উৎসবই শুরু হলো ম্যাচের এক কোণায়। মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে নিশ্চয়ই অবিশ্বাস্যের ঘোর তখনও কাটেনি কারও। মিরাজ কী করলেন, তা ঠিকঠাক বুঝলে তারও একই অবস্থা হওয়ার কথা। শেষ উইকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েছেন, মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে জিতিয়েছেন খাদের কিনারায় যাওয়া দলকে। রেকর্ড কিংবা সংখ্যায় এই লড়াই বুঝানো কঠিন। ১৩৪ রানে যখন আফিফ হোসেন ফিরলেন, তখনই স্বপ্নের সীমানা পৌঁছে গেছে প্রায় শেষ প্রান্তে। প্রায় অর্ধেক দর্শকই ছেড়ে গেছেন গ্যালারি। নবম ব্যাটার হিসেবে দুই রান পর ফিরেছিলেন হাসান মাহমুদও। জয়ের সব সম্ভাবনার শেষ হয়ে গিয়েছিল সেখানেই।

কিন্তু ‘শেষ’ হয়ে যাওয়া লড়াইয়ে পূর্ণতা দিতে পারলেই তো ইতিহাসের নায়ক হওয়া যায়। মিরাজ যে এই ম্যাচের জন্য হলেও হচ্ছেন তা, তাতে সন্দেহ থাকার কথা কম। এই ব্যাটার কী করেননি! ঠাণ্ডা থেকেছেন, ভারতের বোলারদের বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সচল রেখেছেন রানের গতি। তার সঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন একই রকম। বাউন্ডারি এসেছে তার ব্যাট থেকেও। সংখ্যার সীমানা ছাড়িয়ে তারা ঢুকেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল এক ইতিহাসে। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে এনে দিয়েছেন ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয়। এর আগের সময়টুকু ছিল কেবল সাকিব আল হাসানের। সন্ধ্যা নামতে জ্বলে উঠেছিল ফ্লাডলাইট। জ্বলেছে টুকরো টুকরো অনেক আলোও। গ্যালারিতে থাকা হাজার হাজার মানুষের নিজেদের ফোনের বাতি জ্বালিয়েছেন। হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো’ সাকিব আল হাসানের জন্য অথবা না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন সব আলোতে নামিয়ে দিতে চলেছিলেন অদৃশ্য আধার। মিরাজ-মোস্তাফিজ হতে দেননি তেমন।

সাকিব ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া দুই ওভারে দুই দফায় নিলেন চার উইকেট। ব্যাট হাতে করলেন গুরুত্বপূর্ণ রান। কিন্তু তার সব আয়োজন মাটি হয়ে যেতে বসেছিল ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। শেষ অবধি রোমাঞ্চকর জয়ে নায়ক হয়েছে।মিরাজ-মোস্তাফিজ।রোববার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতকে ১ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান করে ভারত। জবাব দিতে নেমে ২৪ বল হাতে রেখে জয় পায় টাইগাররা।

অধিনায়কত্বের উদ্বোধনী দিনে টস ভাগ্য সহায় হয় লিটন দাসের। বাংলাদেশের ১৫তম অধিনায়ক আগে ফিল্ডিং বেছে নেন। শুরু থেকে চাপ ধরে রেখে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে এসে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। তখন ডট বলের চাপে ভালোভাবেই পড়েছিল ভারতের ওপর। সেটা থেকে বের হতে মিরাজের বলে রিভার্স সুইপ করতে যান ধাওয়ান। পায়ে বল লেগে সেটি পৌঁছে যায় তার বুকে। এরপর আঘাত হানে স্টাম্পে। প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ।

পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪৮ রান করে ভারত। ঠিক এর পরের ওভারেই সাকিবকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক লিটন। দ্বিতীয় বলেই রোহিতের ব্যাট ও প্যাডের মাঝ দিয়ে তাকে বোল্ড করেন তিনি। ৩১ বলে ২৭ রান করে আউট হন ভারতীয় অধিনায়ক।

এক বল পর আরও এক উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। এবার অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেন লিটন দাস। সাকিবের বলে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন কোহলি। হালকা হাওয়ায় ভাসা বল অনেকটা গোলরক্ষকের মতো ঝাপিয়ে এক হাতে ধরেন এক্সট্রা কাভার অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা লিটন। ১৫ বলে ১ চারে ৯ রান করে ফিরতে হয় কোহলিকে।

এরপর শ্রেয়াস আয়ারের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন লোকেশ রাহুল। এবার আঘাত হানেন এবাদত হোসেন। ২ চারে ৩৯ বলে ২৪ রান করা আয়ারকে ফিরিয়ে ভেঙে দেন জুটি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ভারতীয় ব্যাটার।

সাকিবের তিন নম্বর উইকেট ছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই তিনি আউট করেন বাউন্ডারি নিয়ে ভুগতে থাকা এই ব্যাটারকে। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা এবাদত হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে ৪৩ বলে ১৯ রান করা সুন্দর।

middle of post box 3

এরপর আবারও এক ওভারে দুই উইকেট পান সাকিব। ৩৫তম ওভারে এসে শুরুতে শার্দুল ঠাকুরকে বোল্ড করেন তিনি। এরপর দ্বীপক চাহারকে ফেলেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফাইফার পূর্ণ হয় সাকিবের।

একপ্রান্ত আগলে লম্বা সময় ক্রিজে ছিলেন লোকেশ রাহুল। নবম ব্যাটার হিসেবে এবাদত হোসেনের বলে আউট হন তিনি। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় দলের পক্ষে ৭০ বলে সর্বোচ্চ ৭৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের পক্ষে ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ৩৬ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন সাকিব। ৮ ওভার দুই বল হাত ঘুরিয়ে ৪৭ রান দিয়ে চার উইকেট পেয়েছেন এবাদতও। বাকি উইকেটটি মেহেদী হাসান মিরাজের।

অল্প রানের লক্ষ্য। উইকেট একটু কঠিন জানা ছিল তা। বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য জরুরি ছিল কেবল উইকেটে টিকে থাকা। কিন্তু সেটিও করতে পারলেন না তারা। ইনিংসের প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরত গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

দ্বীপক চাহারের অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বলে স্লিপে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরত যান উদ্বোধনী ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম বলেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিডউইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিজয় ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে। ২ চারে ২৯ বলে ১৪ রান করেন তিনি।

সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ৪৮ রানের জুটি এগোচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু হুট করেই সাদামাটা আউট হয়ে যান লিটন। সুন্দরের টার্ন করা বল গ্লাভসে লাগে তার। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ বলে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান লিটন।

কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে গেছেন সাকিবও। সুন্দরের বল কাভারের উপর দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এক্সট্রা কাভারে দাঁড়িয়ে এক হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন কোহলি।

দুই ব্যাটারকে হারানোর পর আশার আলো হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এই দুই ব্যাটার ধীরস্থির খেলছিলেন, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু উইকেটে টিকতে পারেননি তারা।

প্রথমে শার্দুল ঠাকুরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৫ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে কেবল ১৪ রান করেন তিনি। এরপর ৪৫ বলে ১৮ রান করা মুশফিক ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে। তার ব্যাট থেকেও কোনো বাউন্ডারি আসেনি।

১২ বলে ৬ রান করা আফিফ হোসেনের দারুণ এক ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ সিরাজ। এরপর হার ছিল নিয়তি। কিন্তু মিরাজ হাল ধরেন তখন। মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে গড়েন ৫১ রানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে শেষ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ। ৪ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৩৯ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। তার সঙ্গী মোস্তাফিজ ২ চারে ১১ বলে ১০ রান। অবিশ্বাস্য এক জয়ের সাক্ষী হয় ক্রিকেট বিশ্ব।

after post box 2