সর্বশেষ

প্রশ্নপত্রে উসকানি মোবাইল বন্ধ রেখেছে সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত

92
Before post box 1

 

নিউজ ডেস্ক : চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক অংশ রাখার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, প্রশ্নপত্রটির প্রণেতা (সেটার) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকটা গা ঢাকা দিয়েছেন প্রশান্ত কুমার। তিনি জেলার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার ডা. সাইফুল ইসলাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। তার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাজরা খানা গ্রামে। কলেজের অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল বলেন, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ভাইরাল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর ঘটনাটি প্রথম জানতে পারি।

এরপর দেশের নানা প্রান্ত থেকে একের পর এক কল আসতে থাকে আমার কাছে। মঙ্গলবার সকালে প্রশান্ত কুমার আমাকে মোবাইল করে উসকানিমূলক প্রশ্ন তৈরির জন্য ক্ষমা চান। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, ঢাকা বোর্ডে তিনি একটি সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করে পাঠিয়েছিলেন। সেটি মনোনীত হয়ে প্রশ্নের ১১ নম্বর ক্রমিকে স্থান পেয়েছে। তার করা প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক উসকনির অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত। এরপর থেকে প্রশান্ত কুমারের মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি। এমনকি বাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। তিনি আরও বলেন, এখন শিক্ষা বোর্ড বা মন্ত্রণালয় যে শাস্তির নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সৃজনশীল সেই প্রশ্নে সনাতন ধর্মের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয় তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, “নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির একটি অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে। ”

middle of post box 3

ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে অনুচ্ছেদে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে এ কথা বলা হয়। এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন। (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব। -ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’-প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। -উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর। ”

প্রশ্নের এ অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা ঝড় ওঠে। এদিকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত এ প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি জানতে শিক্ষক প্রশান্ত কুমারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব জানান, এ জাতীয় প্রশ্ন যারা করেছেন, তারা জঘন্য কাজ করেছেন। এতে কারো দ্বিমত থাকার সুযোগ নেই। প্রশান্ত কুমার একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। তার ২২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া তার লেখা বেশ কিছু বইও আছে। সে কারণে তিনি হয়তো সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। যে মডারেটর প্রশ্ন করেন, সে প্রশ্ন আমাদের দেখার কোনো সুযোগ নেই। কোনো ভুল থাকলে তারাই আবার সংশোধন করে সিলগালাসহ বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দেন। ফলে দায়ভার বোর্ডের নয়।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নারিকেলবাড়িয়া আমেনা খাতুন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। মুসলমানের কাছে জমি বিক্রি করে দেশ ত্যাগ করেছে এমন তথ্য সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ বাড়ানো। ধর্মে-ধর্মে সহিষ্ণুতা বাড়াতে কাজ করা। প্রশ্ন তৈরি করার ক্ষেত্রে অনেক চিন্তা করা প্রয়োজন।

after post box 2