সর্বশেষ

হাসপাতালে পশুর চেয়ে অবহেলিত আমার সন্তান !

বাবার আবেগঘন স্ট্যাটাস ভাইরাল

149
Before post box 1

 

নিউজ ডেস্ক : একজন বাবা রাতের বেলা তার অসুস্থ সন্তানকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে বিনা চিকিৎসায় ফেরার পর চরমভাবে মর্মাহত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

শনিবার সকালে স্ট্যাটাসটি নজরে আসে এই প্রতিবেদকের। এর আগে তার মেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে নিজেকে পশুর চেয়েও অধম আখ্যায়িত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেন গাইবান্ধা জেলা শহরের মুন্সিপাড়ার অসুস্থ ওই শিশুর বাবা জাভেদ হোসেন। এতে সদর হাসপাতালের অব্যাবস্থাপনা ও ডাক্তারদের অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পুরো শহর জুড়ে।

তিনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, সকালে তার পোষা বিড়াল দুটি পশু হাসপাতালে নিলে সেখানকার ডাক্তাররা যেভাবে বিড়াল ছানাকে যত্নসহকারে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন একই দিনে রাতে তার মেয়ে অসুস্থ হলে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক কোনো সেবাই দেননি, বরং তার চোখে মুখে ছিল বিরক্তিভাব।

জাভেদ হোসেনের মেয়ে উম্মে তাহসিন হাবিবা (অর্পিতা)। দীর্ঘ তিন মাস থেকে পেটের ব্যথায় ভুগছে। তিনি ডাক্তারদের মানবিক বিপর্যয়ের প্রশ্ন তুলে তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, শুধু তার মেয়ের ক্ষেত্রে নয়, অসুস্থ হয়ে যে কেউ হাসপাতালে আসলে তাকে সেবা দেয়া ডাক্তারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেন, আজ নিজেকে মনে হচ্ছে পশুর চেয়েও অধম!

অন্যদিকে সদর হাসপাতালের অব্যাবস্থাপনা ও ডাক্তারদের অবহেলার বিষয়টি দারুণভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দিনের বেলা কোনোমতে চিকিৎসা সেবা দিলেও রাত ১১টা বাজলেই জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ঘুমিয়ে পড়েন। তার পরিবর্তে চিকিৎসা দেন ইন্টার্নি ছাত্ররা। এমনকী ব্যবস্থাপত্রও দেন তারা। ম্যাটস পড়ুয়া ছাত্ররা কীভাবে জরুরি বিভাগের সব রোগের ব্যাবস্থাপত্র দেন তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে।

middle of post box 3

সরেজমিনে, শনিবার দিনগত রাত বারোটার সময় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎক দায়িত্বে নেই। তিনি পাশের একটি রুমে ঘুমিয়ে আসেন। তার পরিবর্তে চিকিৎসা দিচ্ছেন দুইজন ইর্ন্টানি ছাত্র। রোগী আসলেই এই দুজনেই ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন তারা।

এ সময় সদর উপজেলার তুলসীঘাট থেকে চিকিৎসা নিতে আসা তানজিন নামে এক এক যুবকের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, আমার মায়ের প্রচণ্ড পেট ব্যথা, তাই কোনো উপায় না পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা বললেন হাসপাতালে ভর্তি হতে। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরতরা তো ইন্টার্ন ছাত্র, দায়িত্বরত চিকিৎসক কই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করেছিলাম ডাক্তারের কথা, তারা বললো স্যার অন্য রুমে আছেন, আমরাই সব পারি।

শুধু তানজিন নয়, ৩০ মিনিটের মধ্যে দুই নবজাতকসহ অন্তত ৫ জন রোগীর চিকিৎসাসহ ব্যবস্থাপত্র দিলেন এই দুই ছাত্র। তখনও দায়িত্বরত চিকিৎসক পাশের রুমে ঘুমিয়ে আছেন। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে জরুরি বিভাগে আসলেন দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রাজীব হোসেন। ৭ মিনিট একজন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েই আবার ১২টা ৪৭ মিনিটে পাশের রেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলেন।

এবার কথা হল জরুরি বিভাগের দুই ইন্টার্ন ছাত্রদের সাথে। একজনের নাম আমিনুল ইসলাম। সে রংপুর সিটি ম্যাটসের ছাত্র। আরেকজনের নাম সিপন রায়। সে বগুড়া টিএমএসএস ম্যাটসের ছাত্র। সব বয়সের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন পাশাপাশি ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন, আপনারা দিতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আমরা বলতে পারবো না আমাদের স্যার জানেন। স্যার কই জিজ্ঞেস করতেই বললেন স্যার পাশের রুমে আছেন।

পাশের রুমে গিয়ে কথা হয় জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডা. রাজিব হোসেনের সাথে। আপনি রুমে আর জরুরি বিভাগে ইন্টার্ন ছাত্ররা চিকিৎসা দিচ্ছে এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, দেখেন রাতে পুরো হাসপাতালের দায়িত্ব আমার ওপর। এত কাজ তাই একটু রেস্ট নিচ্ছি। তাছাড়া ইন্টার্নরা ভালো চিকিৎসা দিতে পারে। আপনি ব্যতীত তারা ব্যবস্থাপত্র দিতে পারে কিনা? তিনি বলেন পারেন আরকি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শন(বিএমএ) গাইবান্ধা জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল ডা. শাহিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, কোনো ডাক্তার যদি দায়িত্ব অবহেলা করে ঘুমিয়ে থাকে অবশ্যই এটা ওই ডাক্তারের উচিত হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি। আর ইন্টার্ন ছাত্ররা সব রোগের ব্যবস্থা পত্র দিতে পারবে না তবে নিদিষ্ট কিছু ওষুধ তারা লিখতে পারবে তবে কর্তব্যরত ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ স্বাক্ষর করতে পারবে না। অর্থাৎ ইন্টার্ন ছাত্ররা সবসময় ডাক্তারদের সহযোগী হিসেবেই থাকবেন।

এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহাবুব হোসেন বলেন, জরুরি বিভাগে দায়িত্ব বাদ দিয়ে ডাক্তার ঘুমিয়ে থাকবে এটা কাম্য নয়। তবে রোগী না থাকলে তারা রেস্ট নিতে পারবেন। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

after post box 2