সর্বশেষ

সিলেটে বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

120
Before post box 1

 

নিউজ ডেস্ক : ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছিল যে বজ্রকণ্ঠ। যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের অপ্রতিরোধ্য সেই বজ্রকণ্ঠের ভাষণ আজও উদ্দীপ্ত করে বাঙালি জাতিকে।  রেলপথ মন্ত্রণালয় ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’র মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সেই দিনগুলো।রেলের এ উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে সর্বমহলে। তা দেখে অনেকটা আশ্চর্য কলেজ শিক্ষার্থী রুমান আহমদ। তিনি বলেন, আমি কখনো এভাবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়কার দৃশ্যপট আগে কখনো দেখিনি। বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর দেখে মুগ্ধ আজমল আলী ও শরিফুল ইসলামও। তারা বলেন, এভাবে কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে কখনো জানা হয়নি। তাই রেলের এ আয়োজন আমাদের কাছে আশ্চর্য লেগেছে। যতই দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। তার মতে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।  

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। ফ্রি-তে সবাই ঘুরে দেখতে পারছেন, ট্রেনের একটি কোচে শৈল্পিক নিদর্শনে ফুটিয়ে তোলা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথার ইতিহাস। বুধবার (২৩ নভেম্বর) সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে আসে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ টি।  বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) জাদুঘরটি আনুষ্ঠানিকভাবে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে ইতিহাস সমৃদ্ধ জাদুঘর দেখতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসছেন অভিভাবকরাও। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একসূত্রে গাঁথা। তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানলে তাদের মধ্যে দেশকে নিয়ে আরও জানার আগ্রহ বাড়বে। সেজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ করা হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘরটি সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করবে। আগামী ১ ডিসেম্বর জাদুঘরটি সিলেট থেকে ছেড়ে যাবে অন্য কোনো স্টেশনে। এর আগে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রেল জাদুঘরটি আখাউড়া, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়াসহ বিভিন্ন জংশন স্টেশনগুলোতে অবস্থান করে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ও বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ রেল জাদুঘরের অভ্যন্তরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ সব ডকুমেন্টারি ছবি ও ভিডিওচিত্র আকারে যুক্ত করা হয়েছে। ট্রেনের কোচের বহিরাংশে ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, সত্তোরের নির্বাচন, মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধকালীন দূশ্যপট এবং পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের রেপ্লিকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। সরেজমিন জাদুঘর ঘুরে দেখা গেছে, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের কোচটির ভেতরে ঢুকতেই ভেসে আসে বঙ্গবন্ধুর দরাজ কণ্ঠে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। দরজার পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত মুজিবশতবর্ষের লোগো। বঙ্গবন্ধুর জীবন-সংগ্রামে আন্দোলনের সেসব দিনগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রেপ্লিকা ও ভিডিও চিত্রে। জাদুঘরে স্থান পেয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার পিত্রালয়, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি।  

middle of post box 3

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’, মুজিব কোট, মুজিবশতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর তামাক পাইপ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধের রেপ্লিকা। জাদুঘরে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

জাদুঘরটিতে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে সৃজনশীল একটি বুক সেলফ। সেখানে শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়াচীনসহ তার কর্মময় জীবনের ওপরে রচিত গুরুত্বপূর্ণ বই। শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’।

‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য রেলওয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ) দপ্তরের তিন জন কর্মচারী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে।

গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়।

after post box 2