সর্বশেষ

নারী নির্যাতনকারী কেরানীহাটের সেলিম কারাগারে !

147
Before post box 1

 

নিউজ ডেস্ক : চরিত্রহীন, নারী নির্যাতনকারী, যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধেরর ঘটনায় মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন (৪৮) নামের সাতকানিয়ার কেরানীহাটের এক ব্যবসায়ীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। আজ বুধবার (২ নভেম্বর) চট্টগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের আদালতে স্ত্রীর করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। বাদী পক্ষের আইনজীবী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেলিম উদ্দিন সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মাদারবাড়ি এলাকার আলহাজ্ব মােহাম্মদ হােসেনের পুত্র। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, আসামি একজন প্রতারক, যৌতুক লােভী, চরিত্রহীন ও নারী নির্যাতনকারী। গায়ের জোরে ধরাকে সরাজ্ঞান করে দেশের প্রচলিত আইন কানুন মানে না। প্রতারণার মাধ্যমে সহজ, সরল মেয়েদেরকে ফাঁদে ফেলে সম্ভ্রম ও ইজ্জত হানী করা আসামীর একমাত্র নেশা ও পেশা। আসামীর সহিত বিগত ১৯/০৫/২০০৫ তারিখে বাদীনির রেজিস্ট্রিকৃত নিকাহ্ নামা মূলে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহ পরবর্তীতে আসামী বাদীনির সহিত দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা কালীন সময়ে বাদীনি জানতে পারেন যে, আসামী পূর্বে বিবাহিত ছিল। আসামী তার ১ম স্ত্রী খালেদা বেগম এর সহিত বিবাহ বলবৎ থাকা অবস্থায় তা সম্পূর্ণ গােপন করে বাদীনির সহিত বিবাহে আবদ্ধ হয়েছে। বাদীনি এ বিষয়ে আসামীকে জিজ্ঞাসা করলে আসামী তা স্বীকার করে এবং ১ম স্ত্রীর ঘরে একজন সদ্য প্রসূত কন্যা সন্তান বর্তমান আছে মর্মে বলে। বাদীনি আসামীর এহেন কর্মকান্ডে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিজ আত্মীয় স্বজনকে জ্ঞাত করলে তারা বাদীনিকে ধৈৰ্য্যধারণ পূর্বক পারিবারিক ও সামাজিক মান মর্যাদা বজায় রাখার নিমিত্তে আসামীর সহিত দাম্পত্য সম্পর্ক অতিবাহিত করার পরামর্শ প্রদান করে। আসামী বাদীনির সহিত যথাযােগ্য মর্যাদায় ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করবেন, বাদীনিকে যথাসাধ্য সুখে রাখবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ফলে বাদীনি আসামীর এহেন প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস স্থাপন করে আসামীর উক্তরূপ কর্মকান্ড কপালের লিখন ভেবে আসামীর সহিত স্বামী-স্ত্রী হিসাবে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করতে থাকে।

আসামী বাদীনির সহিত বিবাহ পরবর্তীতে কিছুদিন সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করলেও পরবর্তীতে তার মুখােশ উন্মােচিত হতে থাকে। যৌতুকের দাবীতে মারধর সহ শারীরিক- মানসিক ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে। আসামী ব্যবসা উপলক্ষ্যে বাদীনির মায়ের নিকট হইতে টাকা হাওলাদ নিয়া দিতে বলে। বাদীনি তার মাতার নিকট হতে ভিন্ন ভিন্ন দফে অনেক টাকা হাওলাদে আসামীকে দিলেও আসামী হাওলাতি টাকা কখনাে পরিশােধ করে নাই। তথাপিও আসামী বাদীনিকে পিতার বাড়ী হতে যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে। ইতােমধ্যে বাদীনির গর্ভেও আসামীর ঔরষে প্রথমে একজন পুত্র সন্তান নাম ইফতেখার হােসেন সাইমুল যাহার বর্তমান বয়স (১৬), পরবর্তীতে কন্যা সন্তান সাদিয়া সবনম ঈশিতা (১২) এবং তৎপরবর্তীতে পুত্র সন্তান ইফতিহাস হােসেন (৭) সহ ৩ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। বাদীনি উক্ত সন্তানাদির ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে আসামীর এহেন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য ক্রমে আসামীর সহিত দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করে আসতে থাকে।

বাদীনি আসামীর সহিত অত্যন্ত দুঃখে কষ্টে সকল অত্যাচার নির্যাতন সহ্য ক্রমে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করতে থাকলেও আসামী বাদীনি এবং আসামীর ১ম স্ত্রীর সহিত বৈবাহিক সম্পর্ক বলবৎ থাকা অবস্থায় তা গােপন করে জনৈক রুবি আক্তারের সহিত পুনঃ ৩য় বিবাহে আবদ্ধ হন। ৩য় স্ত্রীর সহিত বিবাহ পরবর্তীতে ১ম, ২য় ও ৩য় স্ত্রীর সহিত বিবাহ বলবৎ থাকাবস্থায় পুনরায় ২০২১ খ্রিঃ সনে জনৈক ফরিদুল আলমের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী খুরশিদা বেগম এর সহিত ৪র্থ বিবাহে আবদ্ধ হন। ইহা ছাড়াও আসামী বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা পর নারীর সহিত অবৈধ সম্পর্কে ও ব্যাভিচারে লিপ্ত থাকে ।

middle of post box 3

আসামী বাদীনির নিকট গত ০৫/০৯/২০২০ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় ব্যবসা করার কথা বলে বাদীনির নিকট এক লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করলে বাদীনি তা দিতে অস্বীকার করায় আসামী তার প্যান্টের বেল্ট দিয়ে বাদীনিকে এলেপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। ফলে আসামীর প্যান্টের বেল্টের মাথায় সাঁটানো থাকা স্টিলের বক্‌লেস্ বাদীনির ডান পায়ের হাটুর নিচে লেগে মারাত্মক কাটা ও থেতলা যুক্ত রক্তাক্ত জখম হয়। উক্ত আঘাতের ফলে বাদীনি ডান পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করে মাটিতে পড়ে গেলে আসামী তথায় থাকা একখানা কাঠের চেয়ার দিয়া বাদীনির শরীরে এলেপাথাড়ি আঘাত করে মারাত্মক ফুলা জখমে আহত করে।

বাদীনি আসামীর উত্তরূপ মারধরের ফলে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হলেও আসামী বাদীনিকে প্রথমে কোন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। ফলে বাদীনি স্থানীয় ফার্মেসী হতে ঔষধ সেবন করলে ক্ষতস্থান তথা বাদীনির ডান পায়ের হাটুর নিচের আঘাতে পঁচন ধরলে বাদীনি একান্ত নিরুপায় হয়ে ১৫/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখে প্রথমে কেরানীহাটস্থ আশ্ শেফা হাসপাতালে ডাঃ জসিমের কাছে যায়। তিনি একই হাসপাতালের ডাঃ খুরশেদ আনোয়ার এর কাছে রেফার করেন। বাদীনি একই দিন ডাঃ খুরশেদ আনোয়ারের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ডাঃ খুরশেদ আনোয়ার ক্ষত স্থানে অপারেশান সহ চিকিৎসার নিমিত্তে কেরানীরহাটস্থ অল-কেয়ার হাসপাতালের ডাঃ সৈয়দ মোঃ মহসিনের নিকট রেফার করেন। বাদীনি ডাঃ সৈয়দ মোঃ মহসিনের নিকট গেলে তিনি বাদীনির ডান পায়ের হাটুর নিচের ক্ষতস্থানে অপারেশন করেন এবং সেলাই প্রদান করেন।

বাদীনি এই ভাবে চিকিৎসা নিয়া ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনে সুখ শান্তির আশায় সকল অত্যাচার নির্যাতন সহ্যক্রমে আসামীর সহিত দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। কিন্তু যৌতুক লোভী আসামী বাদীনির নিকট হইতে যৌতুকের দাবীতে অত্যচার নির্যাতনে ক্ষ্যান্ত না হয়ে বাদীনিকে অব্যাহত ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে আসতে থাকে। আসামী বাদীনির নিকট হইতে যৌতুক দাবীর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ বিগত ৩/০৭/২০২২ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় এস.কে. অটো মোবাইলস নামক আসামীর দোকানে ডেকে এনে আসামীর ব্যবসায়িক প্রয়োজনের কথা বলে বাদীনির নিকট এক লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। বাদীনি তার পিতৃহীন বাপের বাড়ী হতে এত টাকা যৌতুক আনিয়া দিতে পারবে না মর্মে বললে আসামী প্রথমে তার পায়ের জুতা দিয়া বাদীনিকে মারধর করা শুরু করে। বাদীনি ইহার প্রতিবাদ করলে আসামী দোকানে থাকা একটি লোহার মোরা দিয়া বাদীনিকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। আসামীর আঘাতের ফলে বাদীনি ফ্লোরে পড়ে গেলে আসামী একখানা শক্ত লাঠি দ্বারা বাদীনিকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উপর্যপুরি বারি মেরে মারাত্মক ফুলা জখমে আহত করে।

তখন বাদীনির সাথে থাকা বাদীনির কনিষ্ট পুত্র ইফতিহাস কান্না করতে থাকলে এবং বাদীনির ক্রন্দন ও ঘটনার শোর চিৎকারে আসামীর পরিচিত ও আশে পাশের লোকজন এগিয়ে এসে বাদীনিকে আসামীর কবল হতে উদ্ধার করে। তখন আসামী হুমকি দিয়ে বলে যে, এক লক্ষ টাকা যৌতুক না পেলে বাদীনিকে তালাক দিয়ে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করবে। বাদীনি আসামীর মারধরের ফলে আহত হয়ে ঘটনাস্থল হতে চলে এসে স্থানীয় ফার্মেসী হইতে ঔষধ সেবনে আরোগ্য লাভ করে। আসামী সর্বশেষ ঘটনার তারিখের পর হইতে বাদীনি ও তৎ সন্তানাদির আর কোন খোঁজ খবর নেয়নি।

after post box 2