সর্বশেষ

আগামীকাল চুনতীর মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.) -এর সমাপনী দিবস

288
Before post box 1

 

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী :: মহান আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের স্মৃতিময় দিন সোমবার। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের একই দিনে ইহকাল ত্যাগ করেন। ১২ রবিউল আউয়াল মুসলিম বিশ্বে এক আবেগময় আবহ সৃষ্টি করে। কারণ এই দিনে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের আনন্দ এবং তিরোধানের বেদনা বহন করে আনে। ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মানব ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ এবং স্মরণীয় দিন। নবীকুল শিরোমণির পৃথিবীতে আগমন উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহর জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ-উৎসব। মানবতার মুক্তিদূতের পুণ্যময় স্মৃতিবিজড়িত এ দিবস শুধু মুসলিম নয়; বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত।

‘রবি’ আরবি শব্দ। অর্থ হচ্ছে বসন্ত, সঞ্জীবনী ও সবুজের সমারোহ। রবিউল আউয়াল অর্থাৎ প্রথম সঞ্জীবনীর মাস। এ নামকরণের তাৎপর্য হচ্ছে, মক্কার কাফির ও কোরাইশরা অনাবৃষ্টি খাদ্যের অভাবের কারণে কঠিন বিপদের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলো। রাসুলেপাক (সা.) যে বছর মা আমিনা (রা.) কোলে আগমন করলেন, সে বছর মক্কার শুষ্ক জমি সঞ্জীবিত হয়ে উঠলো এবং শুষ্ক বৃক্ষ তরতাজা হলো। আর চতুর্দিকে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেতে লাগলো।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার অসংখ্য আলেম-ওলামা ও সুফী-সাধকগণের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম হচ্ছে চুনতী। এ জনপদের ঐতিহ্যবাহী চুনতীর একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও বিশাল সুখ্যাতির অধিকার ছিলেন হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রহ.)। শাহ সাহেব হুজুর হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ মহান ব্যক্তিত্বের বড়গুণ ছিলো তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত আশেকে রাসুল (সা.)। আর তাঁর রাসুল প্রেমের এক অনুপম নিদর্শন হচ্ছে- চুনতীর ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.)।

আরও পড়ুন

মহান বিজয় দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা

বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি, নিয়োগ বাংলাদেশে

middle of post box 3

বাংলাদেশে পবিত্র সীরাতুন্নবী (সা.) নামক মাহফিলের তিনিই ছিলেন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের মাস পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসে তিনিই প্রথম সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলের উদ্যোগ করেন ১৯৭২ সালে। ১৯৭৩ সালে ২ দিন ব্যাপী, ১৯৭৪ সালে ৩ দিন ব্যাপী, ১৯৭৫ সালে ৫ দিন ব্যাপী, ১৯৭৬ সালে ১০ দিন ব্যাপী এবং ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে ১২ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.) উদযাপিত হয় পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসে। ১৯৭৯ সালে ১৫ দিনের কর্মসূচির ভিত্তিতে মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.)-এর কার্যক্রম আরম্ভ হয় কিন্তু শাহ সাহেব হুজুর মাহফিলের শেষ পর্যায়ে দুই দফায় দুই দিন করে বাড়িয়ে একে ১৯ দিনের মাহফিলে রূপান্তরিত করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি ১১ থেকে ৩০ রবিউল আওয়াল পর্যন্ত ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.) চলছে।

হযরত শাহ সাহেব হুজুর ইন্তেকাল করেন ১৯৮৩ সালের মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.) -এর ১৯ দিন আগে। শাহ সাহেব হুজুরের ইন্তেকালের পর বিভিন্ন চড়াই- উৎরাই ও বাধা- বিপত্তি সত্বেও অদ্যাবধি এই মাহফিলের অব্যাহত থাকাটা নিসন্দেহে তাঁর বড় কিরামত তথা বুজুর্গীর বড় নিদর্শন ।
গত ৮ অক্টোবর ২০২২ , মোতাবেক ১১ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরী , রোজ-শনিবার হতে ১৩ একর জমি বিশিষ্ট ঐতিহাসিক সীরাত ময়দানে শুরু হচ্ছে ৫২ তম ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী ( সা.) । শেষ হবে ২৬ অক্টোবর ২০২২,মোতাবেক ২৯ রবিউল আওয়াল ১৪৪৪ হিজরী, রোজ : বুধবার।

প্রতি বৎসরের ন্যায় এ বৎসরও অত্র মাহফিলে প্রিয় নবী হযরত (সা.)-এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ এবং তাঁর আনীত পবিত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলামের জরুরী বিভিন্ন বিষয়ের উপর সারগর্ভ আলোচনা রাখছেন অসংখ্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ। বিজ্ঞ পরিচালকের তত্তাবধানে এবং প্রাজ্ঞ সভাপতির সভাপতিত্বে এ মাহফিল পরিচালিত হচ্ছে কালামে পাকের তেলাওয়াত ও না’তে রসুল ( সা.) -এর মাধ্যমে। প্রতিদিন মাহফিল শেষ হবে সভাপতির বক্তব্য ও নবীজী (সা.) -এর প্রতি সালাত-সালাম পেশ আর দুআ-মুনাজাতের মাধ্যমে। মাহফিলে অতিথি , শ্রোতা ও বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য রয়েছে আম জিয়াফত। নারীদের জন্যও আছে ওয়াজ শুনা ও জিয়াফতের আলাদা ব্যবস্থা।
১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সা.)-এর এই আলীশান আয়োজনটি পরিচালিত হয় রাসুল প্রেমিক মুসলিম জনতার আর্থিক সহায়তার উপর ভিত্তি করে। অতএব আসুন, নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী এই বিশাল সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলের জন্য চাঁদা ও আর্থিক অনুদান পেশ করে শাহ সাহেব হুজুরের মত নবীজী (সা.)-এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করি।

এবং এ মহান স্মৃতিবিজড়িত মাহে রবিউল আউয়ালকে শুধুমাত্র মিলাদুন্নবী, সীরাতুন্নবী, সভা, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে এবং বছরের একটি মাস রাসুল (সা.)-এর মিলাদ ও সীরাত বর্ণনা করে আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হবে না; বরং এ মাহে রবিউল আউয়ালকে আমাদের নবীজীর আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণের একটি প্রেরণার উৎসে পরিণত করতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহিমাময় জীবনাদর্শ আমাদের ব্যক্তিজীবনে অনুকরণ-অনুসরণ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রতিফলনের মাধ্যমে এ পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের হক আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য , লোহাগাড়ায় চুনতিতে ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (স.) মাহফিলের সমাপনী দিবস ২৬ অক্টোবর বুধবার দিবাগত ভোররাতে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। আখেরী মুনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হবে। সমাপনী দিবসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরামগণ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখবেন। চুনতী সীরত ময়দানে সমাপনী দিনের মাহফিল শুরু হবে সকাল ৯ টায়। চলতি সনের ৮ অক্টোবর আর্ন্তজাতিকপর্যায়ের এ মাহফিল শুরু হয়। শুরু থেকে দেশের প্রখ্যাত আলেমগণ পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রেখেছেন। হাজার হাজার মানুষ সীরত মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন প্রতিদিন। সমাপনী দিবসে লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লেখক: অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী, পিএইচ.ডি গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

after post box 2