সর্বশেষ

রউল বিলে মাছ ধরার বাউত উৎসব

116
Before post box 1

 

আরও পড়ুন
middle of post box 3

নিউজ ডেস্ক : হেমন্তের শেষে শিশির ভেজা সকাল। তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। হালকা মৃদু কুয়াশা, হিমশীতল ঠাণ্ডা ভেদ করে নেমেছে মানুষের ঢল। যেন এক বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।সবার হাতে কিংবা কাঁধে পলো। কেউবা ঠেলা জাল, হাত খড়া, নেট পলো, ডোবা জাল, খেওয়া জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে যাত্রা করেছেন। প্রতি বছরের মত এ বছরও আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর উৎসবমুখর পরিবেশে দল বেঁধে বিলের পানিতে মাছ ধরতে আসছেন সবাই। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় বাউত উৎসব।শনিবার (৩ নভেম্বর) সকাল থেকে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের হাটগ্রাম পাটুলিপাড়ার বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রউল বিলে মাছ ধরার এ উৎসবে মেতেছেন। বাউত উৎসবে শুধু সৌখিন মাছ শিকারিরা আসেন এমনটা নয়। আশ-পাশের এলাকা থেকে সব বয়সী মানুষ পেশাজীবীরাও এ উৎসবে যোগ দেন। এ সময় বিলের দুই পাড় জুড়ে ভিড় করে হাজারো দর্শনার্থী। সবমিলে মাছ শিকারি ও দর্শকদের জন্য এক মিলন মেলায় পরিণত হয় গোটা বিল এলাকা।এলাকার মাইকে ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট বিলে পলো দিয়ে মাছ শিকার এ অঞ্চলের শত বছরের পুরনো প্রথা। যদিও এখন আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না। তবুও মানুষ মনের আনন্দ নিয়ে যোগ দেয় উৎসবে। বাউত উৎসবে অংশ নেন প্রায় সহস্রাধিক মানুষ। বর্ষা মৌসুমের শেষে সময়ে বিলের পানি যখন কমতে থাকে তখন অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেন এলাকাবাসী।বাউতদের চলাচলে বিলের পানি যখন ঘোলা হয় তখন রুই, গজার, ফলি, কাতলা, শোল, মাগুরসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছ ভেসে ওঠে ও ধরা পড়ে। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ভোরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে কুয়াশা এবং হিমশীতল ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে এসেছেন মাছ ধরতে। শিকারিরা বিলের পানিতে নামার আগে গায়ে তেল মেখে প্রস্তুত হন। বিল পাড়ে জড়ো হয়ে একসঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে পানিতে নামেন সবাই। মাছ ধরার সময় হাঁক-ডাক দিতে থাকেন। কারও পলোতে মাছ ধরা পড়লেই উচ্ছ্বাসে মাতেন সবাই।অত:পর শোল, বোয়াল, গজার, আইড়, রুই মাছ নিয়ে আনন্দে বাড়ি ফিরেন। কেউবা দুই তিনটি মাছ নিয়ে ফিরছেন, কেউবা একটা পেয়ে অল্পতেই তুষ্ট, অনেকে ফিরছেন খালি হাতেও। তবুও সবারই মুখে আনন্দের ছোঁয়া।সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ঘোষগাতি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহিন আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোট সময়ে দাদার সাথে এ বিলে এসেছি। এখনো ভালো লাগা থেকে আসি।পাবনার ওমর ফারুক জানান, প্রতি বছরই রউল বিলে মাছ ধরতে আসি। মাছ পাওয়া বড় কথা না। সবাই মিলে আনন্দ করি। আমরা দুই ভাই দুটি বোয়াল মাছ পেয়েছি। পাবনার আতাইকুলা থেকে আসা রাব্বা খন্দকার বলেন, মাছ পাওয়া যাক আর নাই যাক, কোন ক্ষতি নেই। দিন শেষে মুখ ভর্তি আনন্দ থাকবে। আর এটাই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলিপাড়া-হাটগ্রাম অংশ জুড়ে অবস্থিত রউল বিলে সেই প্রাচীন আমল থেকে মাছ ধরার উৎসব হয়। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি বড় উৎসব। এটা বাংলার এক অনন্য ঐতিহ্য।

after post box 2