সর্বশেষ

ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সকলে উদ্বিগ্ন !

207
Before post box 1

 

middle of post box 3

নিউজটিভিবিডি ডেক্স :: বৈশ্বিক করোনা মহামারির সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণে সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সকলে উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বৃষ্টিপাত বিবেচনা করে। ভারি বৃষ্টি ডেঙ্গুকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করলেও এই বছর হালকা ও থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গু বিস্তার অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব নির্ণয়ে একটি মৌসুমি জরিপ চালানো হয়েছে। সেখানেও লার্ভার উপস্থিতি গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা গেছে। যার কারণে চলমান বর্ষায় এডিস মশার দংশনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অল্প বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা জন্মাচ্ছে। ফলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগাম কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। তাদের উচিত ছিল শুরুতেই এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করে দেওয়া। এছাড়া বর্ষার শুরুতে মশা নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং সাধারণ মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের বিশেষ কারণ। এমনকি দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও পত্র পত্রিকার সূত্রে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু এখন শহর ছেড়ে জেলা, উপজেলা ও গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু জ্বরের রোগী বাড়তে শুরু করলে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আরো ভয়ানক আকার ধারণ করবে। তাই বাড়ির আশেপাশে স্বচ্ছ জমাট বাঁধা পানিতে এডিস মশার বংশ-বিস্তার যেন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সাধারণত এডিস মশার কামড়েই ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু হলো মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। মনে রাখতে হবে সামান্য পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেই ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর তীব্র জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, মেরুদণ্ডে ব্যথা অনুভূত হয়ে ধীরে ধীরে অসহনীয় হয়ে ওঠে। এমনকি শরীরে বিভিন্ন জায়গার র‌্যাশ দেখা দেয়। জ্বর জটিল আকার ধারণ করলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। রক্ত বমি ও অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়, বমি বমি ভাব হয়, খাবারে অরুচি ঘটে, রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করে। এই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই লক্ষণ থাকলে অবহেলা না করে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। এ জ্বর কোনোভাবেই হেলাফেলা করা বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ সময় ক্ষেপণে অনেক রোগীর পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপ হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাসা বাড়ির আশেপাশের আঙিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন যেমন রাখতে হবে, ঠিক তেমনি কোনো অবস্থাতেই গাড়ির টায়ার, রঙের কোটা, অব্যবহৃত প্লাস্টিক কোটা, মাটির পাত্র, ফুলের টব ও ডাবের খোসায় স্বচ্ছ পানি যেন জমে থাকতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। না হয় জমা থাকা পানিতে এই মশার প্রজনন ও বংশ-বিস্তার বাড়তে থাকবে। নজর দিতে হবে এডিস মশা যেসব জায়গায় বংশ বিস্তার করে সেই সমস্ত জায়গাগুলোর দিকে। কেননা পাশের বাড়ির এক মহিলা যখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে তখন থেকে আমাদের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। কারণ আমরা সকলে জানি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে সে নিজেও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যায়। এই মশা যখন আরেকজন সুস্থ ব্যক্তিকে পুনরায় কামড়ায় তখন সুস্থ মানুষটিও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই ডেঙ্গু রোগবাহিত মশার কামড় থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এই রোগের কোনো টিকা এখনো চালু হয়নি। সতর্কতা ও প্রতিরোধেই একমাত্র ভরসা।
উল্লেখ্য মানব দেহে ডেঙ্গু শনাক্তের হার বর্তমান সময়ে এখনো প্রায় ৯ শতাংশেরও ওপরে। ইতিমধ্যে ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে টানা ২০-২৫ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নীচে থাকলেই কেবল তাকে ডেঙ্গুর নিরাপদ সংক্রমণ ধরা যায়। সুতরাং সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখনো ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কেননা বাংলাদেশের সংক্রমণের শতাংশ ৫ এর অনেক উর্ধ্বে। তাই এই মুহূর্তে সকল শ্রেণি পেশার নাগরিকের এই মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে আরো বেশি করে সতর্ক থাকতে হবে। দৃষ্টি রাখতে হবে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে। ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে কোথাও পানি জমে না থাকে। ময়লার ঝুলিতে ঢাকনা লাগাতে হবে। টয়লেট পরিষ্কার ও বাড়ির আশেপাশে যাতে ময়লা পানি জমা থাকতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে সতর্কতা ও সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোত্তম উপায়। কেননা একজনের উদাসীনতাই দশজনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি যা ডেঙ্গুর উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের প্রবণতা নির্দেশ নয় কি? কিন্তু উর্ধ্বমুখীর পূর্বে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলে এবং নাগরিকেরা সচেতন হলে ডেঙ্গুর অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকটা সম্ভব হতো। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে রয়েছে ঘাটতি। সুতরাং এই মুহূর্তে কুম্বকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন না থেকে এডিস মশার বিস্তার রোধ ও নিধনে আরো সতর্ক থেকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, প্রয়োজনে দ্রুত ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। পাশাপাশি সবখানে মশা নিধন, পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম জোরদার ও ওষুধ ছিটাতে হবে এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করতে হবে চিরুনি অভিযান। অন্যতায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো ব্যাপক আকারে বাড়তে থাকবে।

after post box 2